header banner

নেতাজীর স্মৃতি জড়ানো কোদালিয়ার পৈত্রিক ভিটে, আজও বহন করছে তার 'তারুণ্য'

article banner

সুদেষ্ণা মন্ডল, সোনারপুর:  ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস যতবারই লেখা হবে ততবারই খোদাই করা থাকবে নেতাজী সুভাষচন্দ্রের বসুর নাম। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সংগ্রামের অন্যতম কান্ডারী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। "আজাদ হিন্দ বাহিনী"গঠন  করে ভারতবর্ষকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করার জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেই আন্দোলনের অন্যতম নায়ক অন্যতম বীরপুরুষ ছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ভারতবর্ষের ইতিহাসের চরমপন্থী আন্দোলনের অন্যতম কান্ডারী নেতাজী। নেতাজীর সেই মহান বাণী এখনও ভারতবাসীর মনে আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করে, "তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাকে স্বাধীনতা দেব" এই মহান ভাব দ্বারা মহান বাণী আজও ভারতবাসীর মনের সদা বিরাজমান। আজ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৬ তম জন্মদিন সারাদেশ জুড়ে সারম্বরে পালন করা হচ্ছে এই দিনটিকে। মহান বিপ্লবী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে ভারতবর্ষে পরাক্রম দিবস হিসেবে ও উদযাপন করা হয়। সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের সুভাষ গ্রামে নেতাজি পৈতৃক বাড়িতে সারম্বরে পালন করা হচ্ছে নেতাজির জন্মদিন। নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষে সাজিয়ে তোলা হয়েছে গোটা বাড়িটি। সকাল থেকে নেতাজি পৈতৃক বাসভবনের সামনে উপছে পড়েছে ভিড়। সুভাষগ্রামের কোদালিয়ার এই বাসভবনকে দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা। নেতাজির স্মৃতি বিজড়িত সংগ্রহশালাও দেখতে পাবেন সাধারণ মানুষ।২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি সরকারি সভা থেকে ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজির পৈতৃক বাসভবন দেখতে আসেন। তখনই ওই বাড়ির ভগ্নদশা দেখে তিনি বিস্মিত হন। সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি ওই বাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা করেন। তার পর থেকেই হেরিটেজ কমিশন ও রাজ্যের পূর্ত দপ্তর মিলে ওই বাসভবনের সংস্কার শুরু করে।

{link}

২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত চলে এই সংস্কারের কাজ। ৯০% কাজ শেষ হলেও ২০২০ সালে কোভিডের জন্য বাকি কাজ শেষ করা যায়নি। বসু পরিবারের সম্মতি নিয়েই জানকীনাথ বসু বাড়িটিকে যে ভাবে তৈরি করেছিলেন ঠিক সেই আদল বজায় রেখেই সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। সেই কড়ি-বড়গা, কাঠের জানলা, টালির চাল, ইট বিছানো পথ সব কিছুই নিপুণ ভাবে করা হয়েছে। বাড়ির একটি বা দু'টি ঘরে পর্যটকদের জন্য অতিথি নিবাস করার পরিকল্পনা করেছিল সরকার। বাড়ির রন্ধে রন্ধে জড়িত আছে ভারতবর্ষের স্বদেশী আন্দোলনের ইতিহাস। বহু ব্যবহৃত জিনিসপত্র এই বাড়ির মধ্যেই দেখা যায়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জড়িত আছে এই বাড়ির মধ্যে। প্রায় ২০০ বছর আগে, নেতাজির পিতামহ হরনাথ বসু কটক থেকে কোদালিয়ার চিংরিপোতায় বসতি স্থাপন করতে এসেছিলেন। ওই এলাকায় বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা ছিল তাঁর। জমি কিনেও বাড়ি তৈরি করতে পারেননি। নেতাজির বাবা জানকীনাথ বসু তার বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে চেয়েছিলেন এবং সেখানে একটি বিশাল বাড়ি তৈরি করেছিলেন।দুই তলা সহ আটটি কক্ষ নিয়ে গঠিত বাড়িটি। সুভাষ চন্দ্রের পিতার দুর্লভ বই সম্বলিত একটি 'বিনাপানি লাইব্রেরি' রয়েছে।


জানকীনাথ বসু প্রায়ই ছেলেকে এই বাড়িতে নিয়ে আসতেন। নেতাজি প্রতি বছর দুর্গা অষ্টমীতে অঞ্জলি দিতে এখানে আসতেন।তিনি প্রায়ই এই বাড়িতে অন্যান্য বিপ্লবীদের সাথে বিভিন্ন বৈঠক করতেন। বেশির ভাগ সভা হয়েছে বাড়ির পাশের পুকুরের পাশে। সময়ের সাথে সাথে থিয়েটার হলের মতো বাড়ির আরও অনেক উপাদান ধ্বংস হয়ে গেছে। ঘরের প্রতিটি কোণে বহুদিনের বিদ্যুত সময়ের নানান স্মৃতির গন্ধ। রাজ্য সরকার একে হেরিটেজ হাউস হিসেবে ঘোষণা করেছে। হেরিটেজ কমিশনের কর্মীদের সহায়তায় ২০১৫ সালে বসু পরিবারের সম্মতি নেওয়ার পরেই বাড়িটি পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছিল। এই বাড়িটির পুঙ্খানুপুঙ্খ সংস্কারের পরে, নেতাজির ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য নেতাজি কৃতি কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে একটি গেস্ট হাউস তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিবছর নেতাজির  জন্মদিনে সময় সন্ধানে ঘড়ির কাঁটায় যখন ১২.১৫ মিনিট বাজেট তখনই বেজে ওঠে সাইলেন। এখন মহান বিপ্লবী নেতাজীর জন্মদিনে ১২.১৫ মিনিটে শঙ্খ ধ্বনি দেয় গ্রামের মহিলারা। নেতাজির আবেগ স্মৃতি, আদর্শ জড়িয়ে আছে সোনারপুরের কোদালিয়াতে। সোনারপুর রাজপুর পৌরসভার কাউন্সিলর পল্লব দাস বলেন, সারা ভারতে এই দিনটি পালিত হয়। কোদালিয়ায় নেতাজির পৈতৃক ভিটে আমরা এই দিনটি খুব সাড়ম্বরে আনন্দের মাধ্যমে পালন করি। পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করা হয়। নেতাজির ভাবধারাকে যুব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে আদর্শ সমাজ গড়ে তোলার জন্য আমরা অঙ্গীকার বন্ধ। নেতাজির কোদালিয়ার পৈতৃক ভিটেতে পর্যটকদের ভিড় উপছে পড়েছে।

{ads}

news Netaji House West Bengal সংবাদ

Last Updated :