নিজস্ব প্রতিনিধি: শেষমেশ আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করল বিজেপি। ওই কেন্দ্রে আসানসোলের অন্যতম হেভিওয়েট নাম তৃণমূল ছেড়ে আসা জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে প্রার্থী করার একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল গেরুয়া অন্দরেই। যা নিয়ে রীতিমতো জল্পনা বেঁধেছিল রাজনৈতিক মহলে। কারন আসানসোলে যে জীতেন্দ্র তিওয়ারির একটা বিপুল দাপট বর্তমান সেকথা রাজনৈতিক মহলে অসমর্থন করার মতো কেউ নেই। কিন্তু তা যে নেহাতই গুঞ্জন, খবর নয় সেই বিষয়টিই এলো প্রকাশ্যে। কারন ওই কেন্দ্রে বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল কে প্রার্থী করেছে বিজেপি। খাতায় কলমে এখন যে নিজ দলের শক্তিশালি মুখ কেই তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন তা বুঝিয়ে দিলেন গেরুয়া নেতৃত্ব।
{link}
উনিশের লোকসভা নির্বাচনে আসানসোলে বিজেপি প্রার্থী করে বাবুল সুপ্রিয়কে। তার আগের টার্মেও ওই কেন্দ্রে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বাবুল। বাংলায় তৃণমূল হাওয়ায় জোড়াফুল প্রার্থীকে বধ করার পুরস্কার বাবুলকে দেয় বিজেপি। নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয় বাবুলের। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। চোদ্দ সালে প্রথমবার জয়ী হয়েই মন্ত্রিত্ব পেয়ে যান বাবুল। উনিশের লোকসভার পরেও অটুট থাকে মন্ত্রিত্ব। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদলের সময় বাদ পড়েন আসানসোলের সাংসদ। তার পরেই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে দূরত্ব রচনা করেন বাবুল। পরে সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে ভিড়ে যান তৃণমূলে।
{link}
বাবুল ইস্তফা দেওয়ায় শূন্য হয়ে পড়ে আসানসোল কেন্দ্রটি। ১২ এপ্রিল এই কেন্দ্রেই হবে উপনির্বাচন। এখানেই তৃণমূল বধে বিজেপির হাতিয়ার অগ্নিমিত্রা। উপনির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতেই প্রার্থী ঘোষণা করে দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মিনি ইন্ডিয়া আসানসোলের চরিত্র বিচার করে প্রার্থী করা হয় বিহারের পাটনা সাহিব কেন্দ্রের হেরো প্রার্থী বিহারীবাবু শত্রুঘ্ন সিনহাকে। শত্রুঘ্নের নাম ঘোষণা হতেই কোমর কষে নেমে পড়েন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। তার পরেও প্রার্থী ঘোষণা করতে সময় নেয় গেরুয়া শিবির। তখনই রটে যায় বিহারীবাবুকে মাত দিতে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা জিতেন্দ্রকে প্রার্থী করবে গেরুয়া শিবির।
তবে জিতেন্দ্রকে প্রার্থী করার ঝুঁকি শেষমেশ নেননি গেরুয়া নেতৃত্ব। তার কারণ জিতেন্দ্র তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। দলবদলু তকমা দিয়ে তাঁকে বেনজিরভাবে আক্রমণ শানাতে পারত তৃণমূল। তাই জিতেন্দ্রকে প্রার্থী না করে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অগ্নিমিত্রাকে প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির। এতে আদতে বিজেপির লাভ দুটি। এক, অগ্নিমিত্রাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে পারবে না তৃণমূল। আর দুই, তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। অগ্নিমিত্রার লড়াকু ইমেজও তাঁকে এক্সট্রা মাইলেজ দেবে বলেই মনে করছেন গেরুয়া নেতৃত্ব। বিরোধী দলের বর্তমানে যথেষ্ট পরিচিত মুখ তিনি। নিয়মিত দলের হয়ে আসরে দেখা যায় তাকে। সর্বোপরি, অগ্নিমিত্রা ঘরের মেয়ে। আর বিহারীবাবু তৃণমূলের ভাষায় বহিরাগত। তৃণমূলের বিরুদ্ধে গেরুয়া শিবির এই অস্ত্রেও শান দিতে চলেছে বলে দলেরই একটি সূত্রের খবর। ফলে লড়াই যে বেশ জমাটি হতে চলেছে তা স্পষ্ট। এক্ষেত্রে প্রার্থী বাছাইয়ে যে গেরুয়া শিবির এক মোক্ষম চাল চেলেছে তাও রাজনৈতিক মহলকে বলতে শোনা যাচ্ছে। শেষমেষ কি জয়লাভ করেন তাই এখন দেখার বিষয়।
{ads}