এ যেন তেলে জলে মিশে যাওয়ার মতো কান্ড। যা কার্যত কোনোদিন হওয়া সম্ভব হবেনা বলেই জানতেন মানুষ অথচ বাস্তবে তাই হচ্ছে কিংবা বলা চলে হতে চলেছে। তৃণমূলের সঙ্গে জোটে কোনও আপত্তি নেই বলেই জানিয়ে দিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। রবিবার তমলুকের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন প্রবীণ এই বাম নেতা। সেখানেই তিনি বলেন, বিজেপি ছাড়া অন্য যে কোনও দলের সঙ্গেই কাজ করতে প্রস্তুত আমরা। এতোএব যার জন্যে রাজ্যে ৩৫ বছরের শাসন হাতছাড়া হয়েছিল, সেই শত্রুর সাথেই একসাথে গাঁটছাঁড়া বাঁধতে চলেছে কাস্তে-হাতুড়ি-তারা।
একুশের নির্বাচনের আগে বিজেপি এবং তৃণমূলকে একাসনে বসিয়েছিলেন বাম নেতারা। এজন্য জন্ম হয় ‘বিজেমূল’-স্লোগানেরও। কিন্তু একুশের নির্বাচনে একটিও আসন পায়নি কমিউনিস্টরা। তাদের জোটসঙ্গী কংগ্রেসকেও ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে। তবে বিজেমূল স্লোগান যে ভুল ছিল, নির্বাচনোত্তর কালে সে কথা কবুল করেছেন বাম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। সিপিআইএমএল (লিবারেশন) এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য আগেই বলেছিলেন, বিজেপিকেই পয়লা নম্বর প্রতিপক্ষ চিহ্নিত করে লড়াই করা উচিত। এবং তৃণমূল ও বিজেপিকে একাসনে বসানো সমীচিন নয়। তাঁর সেই বক্তব্য যে ভুল ছিল না, তা ফের প্রমাণ হল বিমানের মন্তব্যে।
{link}
রবিবার তমলুকে সিপিএম নেতা নির্মল জানার স্মরণসভায় যোগ দেন বিমান। সেখানেই বিজেপি বিরোধী জোটের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিজেপি ছাড়া অন্য যে কোনও দলের সঙ্গেই কাজ করতে প্রস্তুত আমরা। বিমান মনে করিয়ে দেন, একাধিকবার নয়, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এটা বহুবার ঘটেছে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা হোক বা কচ্ছ থেকে কোহিমা, আন্দোলনের প্রশ্ন দেখা দিলে বিজেপি-বিরোধী সব শক্তির সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত আমরা। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন বিজেপিকে হঠাতে প্রত্যেকে জোট বাঁধুন। তৃণমূল নেত্রীর সেই কথায়ই বোধহয় শিলমোহর দিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
এতোএব একথা স্পষ্ট যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দেশ থেকে পদ্মের শাসন হটাতে নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রুকেও আপন করতে প্রস্তুর দেশের সমস্ত বিপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলি। সেই লক্ষেই ধীরে ধীরে জোটের ঘুঁটি সাজানো শুরু হয়েছে দিল্লির মাটিতে। বঙ্গের বুকে বন্ধুত্ব হচ্ছে সাপ ও নেউলের। এখন এই সমস্ত পদক্ষেপ বিজেপিকে চব্বিশে সিংহাসন থেকে পদচ্যুত করতে সক্ষম হবে কি? প্রশ্ন এখানেই।
{ads}